Thursday, June 20, 2013

‘বাংলালায়ন তো বেহায়ালায়ন’


ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলালায়ন গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, বাংলালায়নের সেবার মান বাড়েনি। বেড়েছে নানা রকম সমস্যা। প্রায়ই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো টাকাটাই জলে যাচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের ক্ষোভ বাড়ছে।
ক্ষুব্ধ হয়ে ফয়সাল নামক একজন গ্রাহক ফেসবুকে লিখেছেন, “বাংলালায়ন তো বেহায়ালায়ন!” 

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে,  বেশ কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মাঝে মধ্যেই বাংলালায়নের নেটওয়ার্ক কানেকটেড হতে সমস্যা হয়। দীর্ঘ সময় কানেকটিং দেখিয়ে ফেইল্ড দেখায়। ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। দ্বিতীয় দফায় ভোগান্তি শুরু হয় কাস্টমার কেয়ার লাইনে সেবার জন্য ফোন দেওয়া হলে। যেখানেও সেবার পরিবর্তে রয়েছে চরম ভোগান্তি। সেখানে ফোন করলে একজন সেবা দানকারীর সঙ্গে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৪ থেকে ৫ মিনিট। এতে অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলোও সময়মতো করতে বেগ পেতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
ব্লগার রাসেল তার ব্লগে লিখেছেন, “অলস দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পরে কিছু সময় নেট ব্রাউজিং প্রত্যেক দিনের রুটিন কর্ম। নেটে ঢোকার আগেই মোবাইলে বাংলালায়নের মেসেজে আমি আতঙ্কিত বোধ করলাম। এরা কখনো ভালো মেসেজ দিয়েছে মনে করতে পারি না। মাসের মিনিমাম ৫-৭ দিন ‘সার্ভার’ নামক বস্তুটার কারণে ৩০-৪০ ঘণ্টা ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে। আমি ইন্টারনেটের পেছনে প্রতি মাসে বিল দেই ১৪৩৭ টাকা। ৩০ দিনে এক মাস, প্রতি ঘন্টায় বিল হয় ২ টাকা, ৪০ ঘন্টায় বিল আসে ৮০ টাকা। এই ৮০ টাকা ইন্টারনেট না থাকার পরও কেন আমাকে প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে?” রাসেল আরও অভিযোগ করেন, ৫১২ কেবিপিএসের ইন্টারনেট স্পিড মাঝে মাঝে ১২৮ কেবিপিএসে নেমে আসে।
 
কাস্টমার কেয়ার
গ্রাহকদের অভিযোগ, “বাংলালায়নের বিক্রেতাদের ফোন দিলে তারা বলেন, তার সেলসের লোক, আমাদের সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিতে বলেন বিক্রেতারা। কানেকশন বিক্রি করার পর তাদের যেন কোনো দায়িত্ব নেই। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিয়ে ৭-৮ মিনিট বসে থাকতে হয়। কাস্টমার কেয়ার ফোন ধরলে বলে, মডেম রি-স্টার্ট করতে। আর বলে যে তাদের নেটওয়ার্কে কোনো সমস্যা নেই। আবার ২-৩ ঘন্টা পর ফোন দিলে বলে, স্যার নেটওয়ার্কে সমস্যা ছিলো এজন্য তারা দুঃখিত।”

এক গ্রাহকের অভিযোগ, বাংলালায়নের কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভগুলো খুবই জঘণ্য। কিভাবে কথা বলতে হয়, তাও তারা জানেন না।

ব্লগার রাসেল ক্ষোভ ও ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুমধুর কাস্টমার কেয়ার রয়েছে বাংলালায়নের। আপনি যে কোনো সমস্যায় ফোন করলে ১ মিনিটের মাঝেই ফোনকল কেটে দিতে বাধ্য হবেন তাদের সুমধুর কথাবার্তার ‘টোন’ শুনে। তবে আপনার সমস্যার কোন সমাধান হবে না। টিএক্স সার্ভার কাহিনী শুরু হওয়ার পর এদের সব ধরনের মোবাইল নম্বর ‘দুঃখিত এই মহুর্তে আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটাতে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’ পর্যায়ে চলে গেছে।”
 
তিনি লিখেছেন, “এক কথায় বলবো, আমি টিএক্স সার্ভার কি বুঝি না, ৪ জি কি জানি না, আমি জানি, বাংলালায়ন জঘণ্য ইন্টারনেটের উজ্জ্বল একটা উদাহরণ। এই যে এতো এতো সমস্যা- দেশে বিটিসিএল নামক একটা বস্তু আছে এরা কখনো তা দেখতে পায় না, শুনতেও পায় না আর কিছু করবে গ্রাহকদের স্বার্থে এটা তো অলীক কল্পনা!!” 
 
রাইটার ২০১২ নামের একজন ব্লগার লিখেছেন, “হায়রে চতুর্থ প্রজন্মের বাংলালায়ন ‘ওয়াইম্যাক্স’!!! স্পিডের জ্বালায় অস্থির অবস্থা……………!! সকালবেলা বাদে বাকি সময়টা স্পিড বলতে গেলে থাকেই না, দুপুরের পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আমার ৫১২ আনলিমিটেড প্যাকেজ ১২৮ কেবিপিএসের প্যাকেজ হয়ে যায়। পেজ ওপেন হয় না, সামান্য গুগল লোড নিতেই অস্থির অবস্থা। বাকিগুলোর কথা নাই-বা বললাম। ওদেরকে টিকিট পাঠালাম গতকাল, আজ পর্যন্ত কোনো ‘মহামানব কাস্টমার ম্যানেজার’ উত্তর দেওয়ার সময় পেলেন না।”
 
“টাকা দিয়ে এভাবে ইন্টারনেট চালাতে ইচ্ছা করে!! ২/৩ মাস আগেও খুব কম সময়েই স্পিডের সমস্যা হতো। আর এখন তো দেখছি এটা নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও লিখেছেন, “এভাবে কি কখনো অনলাইনে কাজ করা যায়? আমি জানি না, কখন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবো বা কিভাবে মুক্তি পাবো।” 

বিভিন্ন আকর্ষণীয় আর লোভনীয় অফারে সেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের বেশ কয়েকটি ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে একটি বাংলালায়ন। ইতিমধ্যে দেশজুড়ে বহু বাংলালায়নের ব্যবহারকারী হয়েছেন। কিন্তু তাদের সেবার মান বাড়েনি। বেড়েছে ভোগান্তি।
 
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিন বলেন, “ভার্সিটির ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আমি ল্যাপটপ চালাই। কখনও অ্যাসাইনমেন্ট আবার কখনও ফেসবুক ব্যবহার করি। কিন্তু কিছু দিন ধরে মাঝে মাঝেই বাংলালায়নের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলোও সময়মতো করতে পারি না। তবে তারা অবশ্য মাঝে মাঝে মোবাইলে এসএমএস করেন যে, তাদের টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে তারা দুঃখিত। আবার কাজ শেষে এসএমএস করেন, টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, এখন ব্যবহার করতে পারেন। এতো ঘন ঘন এই টেকনিক্যাল সমস্যা আর কতোদিন টাকা দিয়ে ইন্টারনেট কিনে আমরা ফেস করবো?”
 
ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে এমন অনেক বাংলালায়ন ব্যবহারকারী রয়েছেন যারা বাংলালায়নের হুটহাট টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন এবং প্রতিনিয়ত পড়ে চলেছেন। চরম ভোগান্তিতে পড়া এসব বাংলালায়ন মডেম ব্যবহারকারীদের একটাই প্রশ্ন, “টাকা ঠিকই যাচ্ছে, ইন্টারনেটের গতি কবে ঠিকঠাক মতো পাবো?”

ফেসবুকে একজন অভিযোগ করেন, বাংলালায়ন বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়। ব্যবহারকারীদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে তারা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি (নেটওয়ার্ক সেটআপ) ছাড়াই ইন্টারনেট কানেকশন দেওয়া শুরু করে। কিউবি এবং বাংলালায়ন তাদের সরাসরি নিজেদের শো-রুমে বিক্রি করে। আর বাকি কানেকশনগুলো তাদের বিক্রেতা অথবা ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রয় করে। বাংলালায়নের বিক্রেতারা অফিস এবং বাসায় ঘুরে ঘুরে কানেকশন বিক্রি করেন। কেনার আগে কানেকশন টেস্ট করার সময় বেশ ভালো স্পিড পাওয়া যায় এমনটা দেখান। বিভিন্ন সুবিধা দেখান। কিন্তু ব্যবহার করার সময় ভিন্ন চেহারা। দিনে খুবই স্লো স্পিড। দিনে গড়ে ২-৩ ঘণ্টা কানেকশন থাকে না। বড় ফাইল ডাউনলোড করা যায় না। বাংলালায়নে একটানা ২ ঘণ্টা ডাউনলোড করলে লাইন ব্লক করে দেয় অথবা স্পিড অর্ধেক করে দেয়।

ক্ষুব্ধ গ্রাহক
চরমভাবে বাংলালায়নের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন গ্রাহকরা। বাংলালায়নের সে হালুম পেজে তিনি বাংলালায়ন কোম্পানিকে ‘রক্তচোষা জোঁক’ মন্তব্য করে লিখেছেন, “আসলে ভালো ব্যবহার পাবার লোক না। টেকনিক্যাল প্রব্লেম কি ঘণ্টায় ঘণ্টায় হয় নাকি? কাস্টমার কেয়ারে ফোন করতে করতে পকেট থেকে আধা মাসের বিল দেওয়া লাগে।
 
কাওসার কাওমিল ইসলাম মুবিন বলেছেন, “সবাই একসঙ্গে ফেলে রাখেন মডেম। যে বিল দিতেন সেটা দিয়ে অন্য মডেম নেন।” 
 
জাবেদ হোসেন ফেসবুক পেজটিতে বলেছেন, “আমি যদি বাংলায়নকে গালি দেই আমার কি খুব পাপ হবে?” 
 
জোবায়ের মাহমুদ বলেছেন, “এই জন্মে নিশ্চয়ই বড় কোনো পাপ করেছিলাম, না হলে কি বাংলালায়নের পাল্লায় পড়ি!” 

ফারহান বলেছেন, “আপনারা ইন্টারনেট সেবা দিতে আসেন নাই। আসছেন আমার মতো গরিবদের পকেট মানি খাইতে। বেশি কিছু বললাম না। কারণ, আগামী মাস থেকে আপনাদের মডেম আমাদের ময়লাওয়ালাকে দিয়ে দেবো।” 
 
আবহি আদিত্য বলেছেন, “কাস্টমাররা যেভাবে ক্ষেপে আছেন, তাতে আগামীতে আপনাদের বোরকা পরে অফিস ছেড়ে পালাতে হতে পারে।” 

সোহেল রানা বলেছেন, “টেকনিক্যাল টিমকে সুতা-কাপড় দিন, তারা বসে বসে নকশি কাঁথার ডিজাইন করুক।”
তানবীর বলেছেন, “নেট বিক্রি বন্ধ করে রুটি কলা বিক্রি করুন।”

২০০৯ থেকে বাংলালায়ন ব্যবহার করছেন অ্যাডভান্স হিয়ারিং সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও )  মোঃ ওমর ফারুক। তিনি বাংলালায়নের ব্যপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলালায়নের সার্ভিস একেবারে নিম্নমানের। কোম্পানীটি এখন বির্তকিত।
সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪.কম

0 মন্তব্য:

Post a Comment

Recent Posts

`
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More