Saturday, November 21, 2009

বিশ্বের প্রযুক্তির আলোচিত নয়টি ‘ভুল ভবিষ্যদ্বাণী’!

আসন্ন ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে তার সাথে আমাদেরকে আগেভাগে পরিচয় করিয়ে দেয় ‘ভবিষ্যদ্বাণী’। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে পূর্বাভাসটি দেয়া হয় যদি তার উল্টোটি ঘটে তবে কেমন লাগবে আপনার! প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আর হর্তাকর্তাদের এরকম পূর্বাভাস এখন পাঠকদের কাছে কেবল কৌতুক মাত্র। আজ আপনাদেরকে বিশ্বের বিভিন্ন সময়ে প্রযুক্তি জগতের আলোচিত দশটি বাজে ভবিষ্যদ্বাণী কথা বলবো।

১) আই পডের মৃত্যু



















২০০৫ এর ফেব্রুয়ারিতে টেলিগ্রাফ পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আমস্টার্ড এর প্রতিষ্ঠাতা স্যার অ্যালেন মাইকেল সুগার ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, আসছে ক্রিসমাসেই আইপডের মৃত্যু ঘটবে। এটি ব্যবহারহীন, অকেজো হয়ে যাবে। ঘটনাক্রমে আমস্টার্ড আর অ্যাপলের মধ্যে সে সময় চলছে হাড্ডহাড্ডি প্রতিযোগিতা। ভবিষ্যদ্বাণীর ঠিক উল্টো ঘটনাটি ঘটেছে। অক্টোবরের মধ্যেই আইপড রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয়। এগারো মিলিয়নেরও বেশি আইপড বিক্রি করে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। যা আগের বছরের চেয়ে শতকরা আট ভাগ বেশি।


২) গৃহে ব্যবহারের জন্য কম্পিউটারের প্রয়োজন নেই


১৯৭৭ সালে ডিজিটাল ইকুয়িপমেন্ট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ওসলেন গৃহে কম্পিউটারের ব্যবহার নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। তবে এধরণের মন্তব্য তিনিই প্রথম করেননি। তারও আগে ১৯৪৩ সালে আই বি এম চেয়ারম্যান টমাস ওয়াটসন ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, সারা বিশ্বে মাত্র পাঁচটি কম্পিউটারের বাজার সম্ভাবনা রয়েছে। নব্বইর দশকের শেষদিকে ওরাকল এর সি ই ও লেরি এলিসন পিসি’কে অপ্রয়োজনীয় ডিভাইস হিসেবে অভিহিত করেন।


৩) ৬৪০ কিলোবাইটের বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই





১৯৮১ সালে বিল গেটস দাবি করেন পার্সোনাল কম্পিউটারে ৬৪০ কিলোবাইটের বেশি মেমরির কোন প্রয়োজন নেই। অবশ্য ১৯৯৬ সালে ব্লুমবার্গ বিজনেস নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তার এই মন্তব্য অস্বীকার করেন। মন্তব্যটি সম্বন্ধে গেটস বলেন, “আমি বোকামো কিংবা ভুল বলেছিলাম তা নয়। কম্পিউটার সম্বন্ধে ধারণা নেই এমন কারো পক্ষেই এই ধরনের মন্তব্য করা সম্ভব।” এ সম্বন্ধে বিল গেটসের সক্ষাৎকারের কিছু অংশ তুলে ধরা হল।

“কম্পিউটারকে আরো কার্যকরী করতে এবং তার উন্নত সফটওয়্যারের জন্য বাড়তি মেমরির প্রয়োজন হয়। মূলত প্রতি দু বছর অন-রই মূল ধারার সফটওয়্যারগুলো পূর্বের তুলনায় মেমরির দ্বিগুন স্থান দখল করে নিচ্ছে।"

“১৯৮১ সালে যখন আই বি এম কোম্পানির পিসি বাজারে আসে তখন অনেকে মাইক্রোসফটের সমালোচনা করে। সে সময় বলা হয় ৬৪ কিলোবাইট মেমরি আর আট বিটের কম্পিউটারই জগতে চিরকাল বিরাজ করবে। এসময় অপচয়ের অভিযোগ এনে অনেকে আমাদের সমালোচনা করেছিল।"

“তবে মাইক্রোসফট এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেছিল। আমরা এখন জানি ৬৪০ কিলোবাইট মেমরির ১৬ বিট কম্পিউটার টিকতে পেরেছিল মাত্র চার থেকে পাঁচ বছর। ৬৪০ কিলোবাইট মেমরিই যথেষ্ট -এমন একটি ভিত্তিহীন উক্তি আমার বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার কোন প্রমাণ নেই। এটি একটি গুজব যা বার বার ব্যবহার করা হচ্ছে।"


৪) টিভি টিকে থাকবে না




আজকের টিভি ভক্তদের জন্য এটি একটি মজার কৌতুক বলা যেতে পারে। ১৯৪৬ সালে ডেরিল জানুক বলেন, টেলিভিশন বেশিদিন টিকবে না, কারণ একটি প্লাইউডের বাক্সের দিকে প্রতি রাতে তাকিয়ে থাকা দর্শকের কাছে একঘেয়েমির কারণ হয়ে দাড়াবে। হলিউডের প্রভাবশালী এই ব্যক্তিত্ব ছিলেন অস্কার বিজয়ী প্রযোজক,পরিচালক, অভিনেতা, চিত্র নাট্যকার ও স্টুডিও নির্বাহী।

১৮০ টি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেটেন্টধারী আমেরিকান বিজ্ঞানী লী ডি ফরেস্ট ১৯২৬ সালে টেলিভিশন নিয়ে যে মন্তব্য করেন তাও বেশ চমকপ্রদ। তিনি বলেন, “ধারণাগতভাবে টেলিভিশন হয়তোবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতার বিচারে টেলিভিশন অসম্ভব একটি ধারণা যা নিয়ে স্বপ্ন দেখে আমাদের খুব কম সময় অপচয় করা উচিৎ"।

৫) এর চেয়ে বড় কোন বিমান আর তৈরি হবে না



১৯৩৩ সালে মাত্র দশ জন যাত্রী বহনযোগ্য বোয়িং ২৪৭ নামে বিমানটি তৈরির পর এর প্রকৌশলী গর্ব করে বলেছিলেন, “ এর চেয়ে বড় আর কোন বিমান তৈরি হবে না"।

একইভাবে মারেকাল ফার্দিনান্দ ফক নামের অধ্যাপক ১৯০৪ সালে বলেন “ উড়োজাহাজ একটি মজার খেলনা হতে পারে, তবে সামরিক বিবেচনায় এর কোন মূল্য নেই"।


৬) স্পাম সমস্যার সমাধান




ই-মেইল ব্যবহারকারীদের জন্য স্পাম একটি বিরক্তিকর সমস্যার নাম। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে বিল গেটস ঘোষণা দিয়েছিলেন স্পাম ই-মেইল মেসেজ সমস্যা দুই বছরের মধ্যেই সমাধান করা হবে।

মাইক্রোসফট চেয়ারম্যান বলেন তারা তিনটি উপায়ে এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি।


৭)ই-বে



২০০৫ এর ফেব্রুয়ারিতে ই-বে কোম্পানির সিইও মেগ হুইটম্যান ঘোষণা দেয়েছিলেন, “ই-বে নিঃসন্দেহে চীনে বিজয়ীর আসনে বসতে যাচ্ছে।” কিন্তু ২০০৬ এর ডিসেম্বরের মধ্যেই কোম্পানিটি তার বাজার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। টম অনলাইন নামে এক চীনা ইন্টারনেট কোম্পানির ছোট ব্যবসায়িক পার্টনার হতে বাধ্য হয় ই-বে।

সেই সাথে চীনে বিনিয়োগ করে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় কোম্পানির কাছে নত হওয়া আরেকটি আমেরিকান কোম্পানির দলে যোগ দেয় ই-বে। চীনের ইয়াহু পার্টনার আলিবাবা’কে হারাতে কোম্পানিটির সি ই ও হুইটম্যান ২০০৫ সালে একশো মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেন।


৮) টেলিফোন মূল্যহীন


ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী ও ‘ইনভেন্টিং দ্যা ফিউচার’ গ্রনে’র লেখক ডেনিস গেবর ১৯৬২ সালে লেখেন “প্রণালীগত ভাবে টেলিফোনের তার দিয়ে তথ্য আদান প্রদান সম্ভব হলেও প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক উপাদানের খরচ বিবেচনায় এটি বাস্তবসম্মত নয়।"

একইভাবে ১৮৭৯ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কোম্পানি তাদের আভ্যন্তরীন প্রতিবেদনে টেলিফোনকে অলাভজনক ডিভাইস হিসেবে উল্লেখ করেন।


৯) ফটোকপি




১৯৫৯ সালে আই বি এম ফটোকপি মেশিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেরক্স এর প্রতিষ্ঠাতাদের সম্ভাব্য মার্কেট সম্বন্ধে বলেছিল “বিশ্বে সর্বোচ্চ ৫০০০ ফটোকপি মেশিনের বাজার রয়েছে।"

অথচ উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী ১৯৬১ সালের মধ্যে জেরক্স প্রায় ষাট মিলিয়ন ডলার আয় করে। ১৯৬৫ সালের মধ্যে যা ৫০০ মিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে।

১৯৫৭ সালে বাণিজ্য বিষয়ক পত্রিকা প্রেন্টিস হল এর সম্পাদক ভষ্যিদ্বাণী করেছিলেন, “ডাটা প্রসেসিং হুজুগে একটি ফ্যাশন যা এই বছর পর্যন্তও টিকবে না।"


0 মন্তব্য:

Post a Comment

Recent Posts

`
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More